Notification texts go here Contact Us Buy Now!

অনশন – আলিম আল রাজি

Unknown
ভূমিকা: বাংলাদেশকে বলা হয় উৎসবের দেশ। এখানে নানা রকম উৎসব পালন করা হয়। প্রতিদিনই এখানে থাকে বিভিন্ন রকম উৎসব। যেমন ঈদ, পুজো, বিয়ে, পয়লা বৈশাখ, বিজয় দিবস ইত্যাদি। অনশনও এ রকম একটি উৎসব। একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আনন্দঘন উৎসব
হিসেবে অনশন ইতিমধ্যে মর্যাদা পেয়ে গেছে।
অনশনের প্রেক্ষাপট: এটি একটি রাজনৈতিক উৎসব। সাধারণত বিরোধী দল এই দিনটি পালন করে। ঐতিহাসিকদের ধারণা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যখন দলবেঁধে ভালো-মন্দ কিছু খেতে ইচ্ছা হয়, তখন তাঁরা অনশন উৎসব পালন করেন। এই খাওয়াদাওয়া ও বিনোদন পাওয়ার জন্য তাঁরা সাধারণত নির্ধারিত পথ বেছে নেন। যেমন নাট্যমঞ্চ। নাটকের মঞ্চ তাঁদের এই উৎসবে বাড়তি আনন্দ জোগায় বলে অনেকের ধারণা।
তারিখ নির্ধারণ: অন্যান্য সামাজিক উৎসবের মতো অনশনও অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়। চাঁদ দেখার সঙ্গে এই উৎসবের কোনো সম্পর্ক এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চাঁদ দেখা কমিটির মতো বিরোধীদলীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি অনশনের তারিখ ঠিক করে। তারপর সেই তারিখ রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। অনশন উৎসবের খবর পেয়ে দেশবাসী মজা লুটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
উৎসবের দিন: নির্দিষ্ট ভেনুতে নির্দিষ্ট দিনে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন। উৎসবে আসার সময় তাঁরা ব্যাগে করে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারদাবার ও পানি নিয়ে আসতে ভোলেন না। তা ছাড়া আগে থেকেই নানা রকম খাবার নিয়ে স্পটে ফেরিওয়ালারা হাজির থাকেন। সকাল ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে খাওয়াদাওয়া শুরু করেন।
খাবারের তালিকায় থাকে ভেলপুরি, বিস্কুট, চানাচুর, কলা ইত্যাদি। ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে নেতা-কর্মীরা নানা রকম মৌসুমি ফলও খান। যেমন শসা, আম ভর্তা, তরমুজ ইত্যাদি। গরম থাকলে তাঁরা আইসক্রিমও গলাধঃকরণ করেন। বাদ যায় না পিঠাও।
অনশন ১০টায় শুরু হলেও দলের প্রধান নেতা অনশন উৎসবে যোগ দেন দুপুর ১২টার দিকে। অন্যরা চুটিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে পারলেও দুঃখের বিষয় হলো প্রধান নেতা খাওয়াদাওয়া করতে পারেন না। কারণ বদ টিভি-ক্যামেরা সারাক্ষণ তাঁর দিকে তাক করা থাকে। যাহোক, তিনি দুপুর ১২টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর ম্যাঙ্গো জুস খেয়ে অনশন ভাঙেন। এ সময় অন্য নেতা-কর্মীরাও আবার ম্যাঙ্গো জুস পান করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা সারা দিনের ভূরিভোজের সমাপ্তি টানেন।
গুরুত্ব: অনশন উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এ উৎসব বিরোধী দলের নেতাদের শরীর, স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। এক দিন দলবেঁধে আয়োজন করে খাওয়াদাওয়া করার ফলে তাঁরা মানসিকভাবেও লাভবান হন। তাঁদের মন-মেজাজ চাঙা ও ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্যের বিকিকিনি হওয়ায় এই দিনটি হকার ও ফেরিওয়ালাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হন তাঁরা। তা ছাড়া নেতাদের খাওয়াদাওয়া দেখে দেশবাসীও অনেক আনন্দ পায়।
উপসংহার: এ কথা চোখ বন্ধ করে বলা যায়, ভোজনরসিক বাঙালি জাতির জন্য অনশন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। দলবেঁধে খাওয়াদাওয়ার এই ব্যতিক্রমী উৎসব আমাদের একতাবদ্ধ হতে শেখায়। আমাদের
মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করে। এর
তাৎপর্য বিবেচনা করে দিবসটির পৃষ্ঠপোষকতার জন্য
সরকারেরও এগিয়ে আসা উচিত।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.